বুয়েটের তিতুমীর হলের দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে এসব প্রতিবাদ চিত্র।
রবিবার বিকেল। পলাশীর মোড় পার হয়ে বাংলাদেশ প্রোকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দূর এগুতেই চোখে পরলো দেয়াল জুড়ে আঁকা একের পর এক গ্রাফিতি চিত্র। এই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন ছবিগুলো দেখে। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে ছবিও তুলে নিচ্ছেন।
এমনই একটি গ্রাফিতি চিত্রের ছবিতে দেখা যায় কচ্ছপের পিঠে ‘বিচার’। এই ছবিটি অতিক্রম করতে করতে দুই তরুণী পথচারী বলছিলো- ‘বিচার হবে নাকি...’। সেই সংশয়ের ভাষাইতো প্রতিবাদের গ্রাফিতি হয়ে জেগে আছে দেয়ালে। বুয়েটের তিতুমীর হলের দেয়াজুড়ে আঁকা হয়েছে এমন বেশ কিছু গ্রাফিতি। পাশের হলটিই শের-ই-বাংলা হল। এই হলেই ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা হত্যা করেছে আবরার ফাহাদকে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের ডাক দিয়েই দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে প্রতিবাদ চিত্র। দেয়ালের সেই প্রতিবাদী গ্রাফিতি এখন ছড়িয়ে পরেছে ফেসবুকেও।
গ্রাফিতি চিত্রে উঠে এসেছে দমন পীড়ন নির্যাতন এবং প্রতিবাদ-প্রতিরোধের নানা ছবি। একেকটি ছবি যেন আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ বার্তা হয়ে শোভা পাচ্ছে বুয়েটের দেয়ালে। হত্যার বিচার ও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদী ছবি আঁকেন।
বুয়েটের তিতুমীর হলের দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে এসব প্রতিবাদ চিত্র। দেয়াল জুড়ে আঁকা এইসব প্রতিবাদ চিত্রে দেখা গোলাপের আদলে মুষ্টিবদ্ধ হাত পাশে লেখা হোক প্রতিবাদ, মর্গে পড়ে থাকা লাশের পাশে রোল নম্বর, আবরারের বাবার আর্তনাদরত ছবির পাশে লেখা- ‘পারবে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে!!’, দেয়ালের আরেকটি গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে- চোখ বাঁধা তরুণের দিকে বন্দুকের নল আকৃতির আঙ্গুলের নিশানায় নিরাপত্তার লুণ্ঠনের ইঙ্গিত, কোনটিতে হোক কলরব লেখা, একটি চিত্রে রয়েছে শিয়ালের খপ্পরে আটকে পরা মুরগীর ছবি, দাবারকোর্টে আবরার ফাহাদ নামটিকে ঘিরে রেখেছে হেলমেট, নিচে চেকমেট কেটে লেখা হয়েছে ডেথমেড। হেলমেট দিয়ে সন্ত্রাসীদের ইঙ্গিত করা হয়েছে। ডানামেলা পাখির গলায় শেকল, ২০১১ নম্বর কক্ষের সামনে পরে থাকা লাশ, রাজনীতির নামে দমন-নিপীড়নের ছবি আঁকা হয়েছে।
শনিবার দিনভর এইসব গ্রাফিতি চিত্র আঁকেন শিক্ষার্থীরা। আর আগে আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে আবরার ফাহাদের প্রতিকৃতির গ্রাফিতি করে নিচে লিখেন ‘জাস্টিস ফর আবরার’।
এইসব গ্রাফিতি চিত্র এখন বুয়েটের দেয়াল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে, পেজে এবং প্রোফাইলে। অনেকে নিজের প্রোফাইল পিকচার হিসেবেও এই গ্রাফিতির ছবিগুলো ব্যবহার করছেন।
প্রতিবাদী তরুণদের কাছে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গ্রাফিতি করার প্রচলন আছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশেও বিভিন্ন আন্দোলনে প্রতিবাদ জানাতে গ্রাফিতি চিত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। দেয়ালে দেয়ালে সৃজনশীল তরুণদের এই সব প্রতিবাদ আন্দোলিত করছে সাধারন মানুষের চিন্তা-চেতনাকেও। তারই একটি দৃশ্য এখন বুয়েট ক্যাম্পাস। চলতি পথে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ছে এইসব গ্রাফিতির সামনে।
Comments
Post a Comment